ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভুল চিকিৎসায় সন্তান জন্ম নিলেও মা গেলেন না ফেরার দেশে

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১৪ আগস্ট ২০২৪

ভুল চিকিৎসায় সন্তান জন্ম নিলেও মা গেলেন না ফেরার দেশে

ভুল চিকিৎসায় সন্তান জন্ম নিলেও মা গেলেন না ফেরার দেশে

নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রত্যাশা ক্লিনিকে সিজারের সময় শান্তা (২৩) নামে একজন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। একজন চিকিৎসককে দিয়ে অ্যানেস্থেসিয়া ও সিজার করানোর কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার পর ওই চিকিৎসককে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের সরুশুনা গ্রামের ইকবাল হোসেনের মেয়ে শান্তাকে গত সোমবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যায় লোহাগড়ার জয়পুর মোড়ে প্রত্যাশা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। 

শান্তার মা লাভলী বেগম জানান, ভর্তির কিছুক্ষণ পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ শান্তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। এ সময় মিথুন বিশ্বাস নামে এক চিকিৎসক নিজেই অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে সিজার করেন। সিজারের পর একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু কয়েকঘণ্টা কেটে গেলেও শান্তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হয়নি। বারবার শান্তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান ভালো আছে। একপর্যায়ে জানানো হয়, শান্তা একটু অসুস্থ। তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিতে হবে।

তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্সযোগে নড়াইলে নেয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার পথে তার শরীরে পুশ করা স্যালাইন একটুও যাচ্ছিল না। তখন ওরা স্যালাইন চেপে ধরে শরীরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। অ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার সময় শান্তার শরীর একটুও নড়েনি। শান্তাকে ভুল অপারেশন করে ওরা অনেক আগেই অপারেশন থিয়েটারে মেরে ফেলেছে।

শান্তার মামা মুস্তাক অভিযোগ করেন, ক্লিনিকের মালিক সেলিম খরচ বাঁচানোর জন্য কোনো অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার না এনে অনভিজ্ঞ ডাক্তার মিথুন বিশ্বাসকে দিয়ে সিজার করেছে। ভুল অপারেশনের কারণে তার ভাগ্নির অকাল মৃত্যু হয়েছে।

মুস্তাক বলেন, আমরা পরে বুঝতে পেরেছি যে আমার ভাগ্নি অপারেশন থিয়েটারেই মারা গেছে। কিন্তু আমাদের বোকা সাজানোর জন্য তারা মৃত অবস্থায় শান্তাকে স্যালাইন লাগিয়ে ক্লিনিক থেকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। হাসপাতালে আসার সময় ওই ডাক্তারকেও সঙ্গে নিয়ে আসি। পরে পালানোর চেষ্টা করলে আমরা তাকে আটকে রাখি। আমরা এই ডাক্তারসহ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।

নড়াইল সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. আসিফ আকবর বলেন, শান্তা নামের ওই রোগীকে মৃত অবস্থায় নড়াইল সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। হাসপাতালে আসার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে মারা গেছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ বের করতে হলে ময়নাতদন্ত করতে হবে।

নড়াইল সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, লোহাগড়ায় একটি ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় মিথুন বিশ্বাস নামে এক ডাক্তারকে হাসপাতাল থেকে থানায় এনে রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার লোহাগড়া থানায় মামলা করলে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৩ বছর আগে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে এসএম নাঈমুর রহমানের সঙ্গে শান্তার বিয়ে হয়। নাঈমুর ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শান্তার বাবার বাড়ি লোহাগড়া উপজেলার সরুশুনা গ্রামে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।