সেতু নির্মাণে ধীরগতি, চলাচলে ভোগান্তি
ধীরগতিতে চলছে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার গড়াই নদীর ওপর নির্মাণাধীন নাদুরিয়া-লাঙ্গলবাধ সেতুর কাজ। কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। অথচ এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬৭ ভাগ। সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার করতে হচ্ছেন মানুষ।
রাজবাড়ীর পাংশার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পাংশা উপজেলার পাংশা হেডকোয়ার্টার থেকে মাগুরা জেলার লাঙ্গলবাধ জিসি সড়ক পর্যন্ত গড়াই নদীর ওপর ৬৫০ মিটার দৈর্ঘের গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সেতু নির্মাণের কাজ পায় এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড মীর হাবিবুল আলম (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতুর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের জুন মাসের ৩ তারিখে। কাজের সময়কাল ছিল ৩৬ মাস।সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬৩ কোটি ৯১ লাখ ৬৮ হাজার ১৭০ টাকা। গত বছরের জুন মাসে কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাংশা উপজেলার ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার গাঁ ঘেষে বয়ে গেছে গড়াই নদী। নদীর পাংশা উপজেলার কজবামাজাইল ইউনিয়নের মধ্যে নাদুরিয়া ঘাট। আর ওপারে মাগুরা জেলার লাঙ্গলবাধ হাট। ঝিনাইদহ, মাগুরা ও রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মধ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে এই সেতু।
নাদুরিয়া বাজার থেকে ৫০০ মিটার দক্ষিণে সেতুর প্রথম খুঁটি। সেতু নির্মাণের কিছু সরঞ্জাম সেতুর পাশেই পড়ে আছে। সেতুর রাজবাড়ী অংশে ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। মূল নদীর ওপর একটি পিলার বাদে বাকি পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর ১৩টি স্প্যানের মধ্যে মূল নদীতে ছয়টি স্প্যান রয়েছে। এরমধ্যে চারটি স্প্যান বসানোর কাজ বাকি রয়েছে। সেতুর দুই পাশে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। সেতুর উত্তর পাশে নাদুরিয়া ঘাট। এখন নদীতে প্রচুর স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাটে ট্রলারে করে মানুষ, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ভ্যান পারাপার করা হচ্ছে।
ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা রাজবাড়ী জেলার শেষ প্রান্তে বসবাস করি। পাংশা উপজেলায় আমরা যতটা যাই, তার চেয়ে বেশি আমরা মাগুরা জেলার লাঙ্গলবাধ হাটে চলাচল করি। আমরা যেসব ফসল উৎপাদন করি, তার বেশিরভাগই লাঙ্গলবাধ হাটে বিক্রি করি। তবে ব্রিজ থাকলে আমাদের ফসল নিতে সুবিধা হতো। চার বছর হয়ে গেল ব্রিজের কাজ শুরু করেছে। কাজের যে গতি মনে হয় আরো চার বছর লাগবে। ব্রিজের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হলে আমাদের কষ্ট কিছুটা কমবে।
কসবামাজাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার সুফল মাহমুদ বলেন, সেতুটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখন ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর যেতে হলে ফরিদপুর অথবা কুষ্টিয়া জেলা ঘুরে আসতে হয়। এতে প্রায় ৭০-৮০ কিলোমিটার রাস্তা বেশি ঘুরতে হয়। আমাদের ইউনিয়ন একটি কৃষিপ্রধান এলাকা। এই এলাকার পেঁয়াজ, পাট ও ধান বেশি উৎপাদিত হয়ে থাকে।
নাদুরিয়া ঘাট পার হলেই মাগুরার লাঙ্গলবাধ হাট। সেখানে আমাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সুবিধা হয়। কিন্তু অনেক রাস্তা ঘুরে আসা লাগে বলে অনেক কম দামে আমাদের ফসল বিক্রি করতে হয়। এছাড়া এই ব্রিজ হলে যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ অঞ্চলের মানুষের ঢাকা যেতে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় বাঁচবে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ ওঠাতে পারছে না। তাই আমাদের ভোগান্তিও কমছে না।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক বিজন কৃষ্ণ বাড়ই বলেন, ১৩টি স্প্যানের মধ্যে ৯টি স্প্যান বসানো হয়েছে। নদীর মধ্যে চারটি স্প্যান বসানো বাকি আছে। এখন নদীতে পানি বেড়ে গেছে। এ কারণে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সেতুর দুই পাশে ৮০০ মিটার সংযোগ সড়কের কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত ওই সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের জমিতে কাজ করতে দিচ্ছেন না। জমি অধিগ্রহণ করা থাকলে আমরা এখন রাস্তার কাজ করতে পারতাম। রাস্তার কাজ করতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে। আমাদের সেতুর ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাজারে সব প্রকার নির্মাণাধীন জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য কিছুটা অর্থের ঘাটতি হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
রাজবাড়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ হোসেন বলেন, ব্রিজটা অনেক উঁচু। নদীর মধ্যে একেকটা পিলার করতেই ছয় মাস সময় লাগছে। দুই পাশের সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তার টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে সেতুর কাজের কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে জমি অধিগ্রহণের টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া সেতুর কাজের সময় চলতি বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আমরা ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব সেতুর কাজ শেষ করা হবে।