ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে ৫ টাইগার ক্রিকেটার
সামগ্রিকভাবে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে তৃতীয়বারের মতো এখন ভারত সফরে রয়েছে করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০১৯ সালে টাইগাররা সর্বশেষ সেখানে গিয়েছিল। টেস্ট সিরিজে সেবার বাজে পারফরম্যান্স হলেও চার বছর আগের সেই অতীত এখন ভিন্ন বাস্তবতায় হাজির হয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করাটা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন। সফরকারীদের এবার তাই সমীহই করছে টিম ইন্ডিয়া।
ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর এবার চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যদের সামনে কঠিন মিশন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের অনুপ্রেরণা কাজে লাগিয়ে দলীয় পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে রচিত হতে পারে নতুন ইতিহাস। অভাবনীয় সেই অর্জনের পথে শক্তিশালী ভারতকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারেন ৫ টাইগার ক্রিকেটার।
মেহেদী হাসান মিরাজ
সত্যিকারের অলরাউন্ডার হতে যেমন পারফর্ম করা দরকার, মিরাজ ঠিক তেমনটাই করছেন। দলের চাপের মাঝে হার না মানা লড়াকু মানসিকতার জন্য প্রশংসিত এই ক্রিকেটার পাকিস্তান সিরিজে দুই টেস্টে সবমিলিয়ে ১৫৫ রান করেন। একইসঙ্গে বল হাতে নিয়েছেন ১০ উইকেট। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ জয় পায় ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সেই জয়ে বড় অবদান রেখে মিরাজ দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। সিরিজসেরার পুরস্কারটা অবধারিতভাবেই তার হাতে উঠেছিল। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের ২৬ রানে ৬ উইকেটের পতনের পর লিটন দাসের সঙ্গে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন মিরাজ । প্রথম টেস্টে তিনি মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ১৯৬ রান যোগ করেন, যার প্রেক্ষিতে দলীয় স্কোর ৫০০ পেরিয়ে যায়। মিরাজ নিজের জাত প্রমাণ করে ধীরে ধীরে সাকিব আল হাসানের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসছেন।
ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ যে তিন টেস্ট এ পর্যন্ত খেলেছে, প্রতিটিতেই মিরাজ ছিলেন। দেশটিতে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তিনি খেলেছেন। ২০২২ সালে ওয়ানডে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে দুটি অসাধারণ ইনিংস খেলে সবাইকে মুগ্ধ করে দেন। প্রথম ম্যাচে রান তাড়ায় টাইগারদের ৯ উইকেট হারানোর পর মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বনে যান জয়ের নায়ক। তার ৩৮ রানের সেই ইনিংসটি ছিল মহামূল্যবান। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে বুক চিতিয়ে লড়াই করে তুলে নেন সেঞ্চুরি, থাকেন অপরাজিত। সেই ওয়ানডে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় তিনিই হয়েছিলেন।
নাহিদ রানা
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা। মাত্র তিন টেস্টের ক্যারিয়ারে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার গড়ে গতি বজায় রেখেছেন। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘণ্টায় ১৫২ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে দ্রতগতির বলের রেকর্ড। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা দ্রুতগতিতে বোলিংয়ে দিনেদিনে পরিচিত হয়ে উঠছেন ‘চাপাইনবাবগঞ্জ এক্সপ্রেস’ নামে।
ক্রিকেট বল নিয়ে খেলা শুরু করার পাঁচ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সিলেটে চলতি বছরের মার্চে শ্রীলংকার বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল। প্রথম-শ্রেণির প্রতিযোগিতায় দ্রুত প্রবেশের পর তিনি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩২ উইকেট নিয়েছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে রানা চার উইকেট নিয়েছিলেন, যার মধ্যে তার প্রথম তিন ওভারে শিকার করেছিলেন তিন উইকেট। বাবর আজম এবং ফর্মে থাকা সৌদ শাকিলের উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং অর্ডারের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন।
হাসান মাহমুদ
পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ২৪ বর্ষী এই পেসার দেখিয়েছিলেন দাপট। প্রথমবার টেস্টে শিকার করেন ৫ উইকেট। প্রতিপক্ষের এক ইনিংসে ১০ উইকেটের সবগুলোই বাংলাদেশের পেসাররা নিয়েছিল। তাতে মূল ভূমিকা রাখেন হাসান। তিনি ১৩৫ কিলোমিটার গড় গতিতে বোলিং করেন। বলে সুইং এবং সীম করাতেও সক্ষম। চলতি বছরের শুরুতে শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের আগে তিনি প্রধানত সাদা বলের ক্রিকেটে খেলেছেন। হাসান পাকিস্তানে সিরিজে তারকা পারফর্মার ছিলেন। পুরনো বলে ব্যাটারদের উপর চাপ সৃষ্টি আগে নতুন বলেও ছিলেন আগ্রাসী। দ্বিতীয় টেস্টে লিটন দাসের সাথে অষ্টম উইকেটের গুরুত্বপূর্ণ জুটিতে দুই ঘণ্টা স্থায়ী ছিল, যা খেলোয়াড় হিসেবে তার চারিত্রিক দৃঢ়তার বহিঃপ্রকাশ।
সাদমান ইসলাম
বাঁহাতি ওপেনার রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে ধৈর্যশীল ৯৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ জয়ের আবহটা তৈরি করেছিলেন। শাহিন শাহ আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি পেস আক্রমণের চাপকে সামলে সাবলীল ছিলেন সাদমান। তারপর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ দলকে দেওয়ার কাজটা দারুণভাবেই করেন। নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি মিস করলেও দলের জন্য অবদান রাখেন। মাহমুদুল হাসান জয়ের চোটের কারণে মূলত তিনি একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন। জাকির হাসানের সঙ্গে জুটি গড়ে সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। দুই বছর পর টেস্ট দলে ফিরে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া এই ক্রিকেটার ভারতের বোলিং লাইনআপের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারেন।
নাজমুল হোসেন শান্ত
পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে ১৫ বছর পর বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে চমৎকার নেতৃত্বের দক্ষতা দেখিয়েছিলেন শান্ত। ফাস্ট বোলারদের সময় মতো আক্রমণে এনে প্রতিপক্ষকে নাকাল করার কৌশলে বেশ সফল। ২৬ বর্ষী এই তরুণ ক্রিকেটারকে দলের সিনিয়র এবং জুনিয়রদের মধ্যে সেতু হিসেবেও দেখা হয়। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের বাজে পারফরম্যান্সের পর তাকে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিসিবি। এরপর সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পান সেঞ্চুরি, ঐ ম্যাচে ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে লাআল বলের ক্রিকেটে হারায় টাইগাররা।
২৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৫টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফ সেঞ্চুরি থাকলেও শান্তর ব্যাটে রানের ধারাবাহিকতা নেই। ফরম্যাটটিতে ২৮.৫০ গড়ে তার করেছেন মোট ১,৫৩৯ রান। বিস্ময়কর হলেও সত্য, টপ অর্ডারের এই ব্যাটার শেষ ৯ ইনিংসে একটিও অর্ধশতকের দেখা পাননি। সর্বশেষ পাকিস্তান সিরিজে ২৬ বর্ষী ক্রিকেটার ব্যাট হাতে সমর্থকদের উপহার দেন একরাশ হতাশা। তিন ইনিংসে ১৯.৩৩ গড়ে করেছিলেন মাত্র ৫৮ রান। শেষ ৯ ইনিংস বিবেচনায় নিলে পরিসংখ্যান আরো ভয়াবহ। তিনি ১২.৬৭ গড়ে করেছেন মাত্র ১১৪ রান। এর মধ্যে পাঁচ ইনিংসে তিনি দুই অংকের ঘরে যেতেই পারেননি। তবুও ধৈর্য লড়াকু প্রকৃতির হওয়ায় বিসিবির প্রথম পছন্দের অধিনায়ক রয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ব্যাট হাতে দলের জন্য অবদান রাখার কথাই দেশ ছাড়ার আগে জানিয়েছিলেন শান্ত। প্রতিশ্রুতি রাখতে পারলে সেটি টিম ইন্ডিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে আসতেই পারে।