ঢাকা   শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মনোগামী: কেউ লাস্ট ডিফেন্ডার নয় কিংবা সবাই লাস্ট ডিফেন্ডার

প্রকাশিত: ০০:২৭, ২ মে ২০২৪

মনোগামী: কেউ লাস্ট ডিফেন্ডার নয় কিংবা সবাই লাস্ট ডিফেন্ডার

মনোগামী: কেউ লাস্ট ডিফেন্ডার নয় কিংবা সবাই লাস্ট ডিফেন্ডার

দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলে সম্পর্ক হয়ে ওঠে পুরনো কাপড়ের মতো, আরাম আর আরাম। আরামের সঙ্গে মায়ার যেমন একটা যোগসাজশ থাকে। তেমনি অভ্যাসের ওপর নাম যেন মায়া। দীর্ঘ দাম্পত্য কিংবা প্রেমের জীবন অনেকটা পুরনো কাপড়ের মতো। স্বস্তি, মায়া, অভ্যাস মিশে একাকার হয়ে থাকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে, প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে। কিন্তু পুরনো কাপড় অস্বীকার করা যায় না। তখন মানুষ ছোটে নতুনের দিকে। দর্শন ও চর্চার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কিন্তু সম্পর্কের গাঁটছড়া খুলে ফেলা অত সহজ কি? বিশেষ করে সম্পর্কের মালার গিঁট যদি হয় সন্তান। 
অল্প কথায় বললে, এই তো ‘লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’। তবে অল্প কথায় সব কথা শেষ করলে চলে না। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত চরকি অরজিনাল ফিল্ম ‘লাস্ট ডিফেন্ডার্স অব মনোগামী’। মনোগামী দর্শনে বিশ্বাসী এক নামিদামি বিজ্ঞাপন সংস্থার বিবাহিত বস শাফকাত (চঞ্চল চৌধুরী)। দেখতে দাম্পত্য জীবনে সুখী শাফকাতের মনে প্রেম বা সামথিং লাইক প্রেমের (!) লহর তৈরি হয় তারই অফিসে কর্মরত লামিয়াকে (জেফার রহমান) দেখে। সমুদ্রের তীরে গড়া বালির ঘর যেমন ভেঙে যায় ঢেউয়ে, লামিয়ার উপস্থিতিতে শাফকাতের ঘরও প্রায় ভাঙতে বসে, তবে ভাঙেনি। ওই তো জীবনের কিছু লেনদেন সহজে মুছে ফেলা যায় না।

গল্পটা খুব সহজ, জীবন থেকে নেয়া। তবে কার জীবন সেটা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। মানবসভ্যতার শুরু থেকে মানুষ বহুগামিতার চর্চা করে এসেছে বলে আমরা জানি। যদি ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তাহলে জানা যায়, আদিম যুগে যখন মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণা উৎপত্তি লাভ করে তখন বিয়ের সূত্রপাত হয় এবং পরিবার প্রথার মূল উৎস ‘বিয়ে’। এ থেকে বলা যায় প্রথা, নিয়মকানুন সভ্যতার সৃষ্টি। নিয়মকানুন, প্রথা মানুষের আচরণকে দমন করার আদেশ দেয়, কিন্তু আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে পারে কি? 

ফ্রয়েড সভ্যতার অসন্তোষ (সিভিলাইজেশন অ্যান্ড ইটস্ ডিসকনটেন্ট) বলে, সভ্যতা মানুষের যন্ত্রণার জন্য দায়ী। সৌন্দর্য, শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতার (বিউটি, অর্ডার অ্যান্ড ক্লিনলিনেস) সভ্যতা মানুষকে প্রথায় বাঁধল। কিন্তু ফাঁকফোকর দিয়ে প্রবৃত্তি তার চর্চা আদায় করে নেয়। পলিগামী সভ্যতার শুরুতে খোলামেলা ছিল, এখন গোপনে আছে। সবাই জানে, কম-বেশি অনেকেই চর্চা করে। কিন্তু দেখা যাবে তারাও শাফকাত, দর্শন মনোগামীরই। ফ্রয়েডের মতে, ধরা পড়ার ভয় মানুষকে মন্দ কাজ করা থেকে বিরত রাখে। 

এ ভয়ই মানুষের মধ্যে অপরাধ বোধ তৈরি করে। সমস্যা এখানে, ফারুকী স্পষ্ট করেননি কেন শাফকাতের ভেতরে দর্শন চর্চার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। কেনই-বা শাফকাত লামিয়ার সঙ্গে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছিল। কিংবা শাফকাতের আকাঙ্ক্ষা উৎসারণ হয়েছে কোথা থেকে। একঘেয়েমি জীবন নাকি লামিয়ার প্রতি প্রবল যৌন তাড়না। আবার লামিয়ার চরিত্রটিও খুব বেশি প্রতিষ্ঠিত না হলেও লামিয়া চরিত্রে জেফারের অভিষেককে সাধুবাদ জানানো যায়, তবে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। একই কথা আরো দৃঢ়ভাবে প্রযোজ্য চঞ্চলের ক্ষেত্রে। কিন্তু একটা থেকেই যায়! অন্তত ‘দ্য চঞ্চল চৌধুরী’ থেকে আমরা এমনটা আশা করি না। শাফকাতের স্ত্রী (সামিনা হুসেন প্রেমা) চরিত্রটি আরো বেশি স্ক্রিন টাইম ও ইনটেনসিটি দাবি করে গল্পের খাতিরেই, সেটাও অনুপস্থিত ছিল। 

সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফির কালার গ্রেডিংয়ে শীতের সকালের মোলায়েম রোদে ফুটে উঠেছিল মিহি দুঃখ। মনোগামীতে সে মোলায়েম রোদ ফুটে ওঠেনি। তবে মেটাফর ভালো ছিল। আধুনিক মেট্রো বনাম পুরনো যুগের কার। সংলাপও বেশ ভালো, মেট্রোরেলের ব্যাপারটা খুব আজব। প্রথমবার ইভেন্ট করার সময় মেপে দেখেছিলাম ১৫০ গজ, এখন দেখি ১৮০ গজ। এইটা কোনো কথা!

লামিয়া আধুনিক মননের আর শাফকাত পুরনো ধ্যানধারণার। ক্ষেত্র বিশেষে শাফকাতের চিন্তার সীমানা ছাড়িয়ে গেছে লামিয়া। কিন্তু অপরাধ বোধের কথা যদি ধরা হয়, সেটা লামিয়ার মধ্যেও উপস্থিত ছিল কিংবা তার ফিয়ন্সের মধ্যেও (শেষ দৃশ্যে)। তাহলে লাস্ট ডিফেন্ডার কে? সেখানেও একটা অস্পষ্ট ছোঁয়া। অবশ্য বাকিটা দর্শক ভেবে নেবে এমন চিন্তা যদি ফারুকীর থাকে, তবে সেটা ভিন্ন আলাপ। আবার এমনটাও হতে পারে যে, এই সিরিজের আরো পর্ব আসবে। শাফকাতের কিশোর-কিশোরী ছেলেমেয়ে শুদ্ধ (শুদ্ধ) আর রাইয়ের (প্রত্যয়ী প্রথমা রাই) সংলাপটুকুই কেবল স্পষ্ট বার্তা দেয়। বাকি সব যেন গোলকধাঁধা। কেউ লাস্ট ডিফেন্ডার নয় কিংবা সবাই লাস্ট ডিফেন্ডার। আধুনিকতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নতুন নতুন শব্দ জুড়ে দিয়েছে। আগের প্রজন্ম বিয়ে করে পরকীয়া করছে, হতে পারে এ প্রজন্ম বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে সিচুয়েশন-শিপে জড়াচ্ছে। তবে দর্শন আর চর্চায় মিল না থাকলে কাউকেই খুব বেশি আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। 

গানের কথায় বলতে হয়, ‘কতটা গভীর জলে তুমি-আমি মাছ/ মন যদি পাখি হয়, শরীরটা গাছ।’ শিল্প কখনো ব্যাকরণ মেনে চলে না। শিল্প মানেই একধরনের এক্সপেরিমেন্ট। তবে সে এক্সপেরিমেন্ট দেশের কোনো অনুকরণীয় (!) রন্ধনশিল্পীর মতো না হলেই হয়। আবার দর্শক হিসেবে আমাদেরও ভিন্ন জনরার শিল্পের স্বাদ গ্রহণের মানসিকতা রাখা উচিত।

শিরোনাম

শেখ হাসিনা ফের প্রধানমন্ত্রী হলে শিক্ষকদের সব দাবি পূরণ হবে
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বর্তমান সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনতে হবে
কানাডায় পোশাক রপ্তানিতে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে
চাহিদাভিত্তিক শ্রমশক্তি গড়তে ৩০ কোটি ডলার দেবে এডিবি
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন:শেখ হাসিনা
বুধবার বাংলাদেশি টাকায় মুদ্রা বিনিময় হার
পদোন্নতি পেলেন স্বাস্থ্য সচিব আনোয়ার হোসেন
ইতালির ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান রাষ্ট্রপতির
সরকার টিসিবির জন্য ১২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার তেল ও ডাল কিনবে
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার রোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
জামানত বেড়েছে সংরক্ষিত নারী আসনে